Header Ads

শহর সমাজসেবা কার্যালয় ‍ফরিদপুরে সমাজকর্ম ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠান-২০১৭

সরকারী রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে, ফরিদপুর এর সমাজকর্ম সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের ৬০দিন ব্যাপী ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ শেষে সমাপনী অনুষ্ঠান

স্থান ঃ শহর সমাজসেবা কার্যালয়,ফরিদপুর। তারিখ ঃ ১৮-০৫-২০১৭খ্রিঃ

সমাপনী অনুষ্ঠানের কিছু স্থিরচিত্র





মাঠকর্ম প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের সুযোগ্য সমাজসেবা কর্মকর্তা, শ্রদ্ধেয় জনাব মোহাম্মাদ নূরুল হুদা।প্রধান অতিথি ছিলেন ঐতিহ্যবাহী সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুরের সমাজকর্ম বিভাগের সম্মানিত বিভাগীয় প্রধান শ্রদ্ধেয় বিনয়ী ও মিষ্টভাষী জনাব তপন কুমার কুন্ডু। অনুষ্ঠানে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সভাপতি মহোদয়, প্রধান অতিথি, পৌর সমাজকর্মী  ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে আগত ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।

 মাঠকর্ম  বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ হচ্ছে পূথিগত বিদ্যাকে বাস্তবে প্রয়োগ করে মানুষের কল্যানে কাজে লাগানোর জন্য হাতে কলমে দেখানোর একটি কৌশল।কথায় আছে,“বিদ্যার সাথে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ আর জীবনের সাথে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু”।যে বিদ্যা আমরা অর্জন করি তা যদি মানুষের কল্যানে প্রয়োগ করতে না পারি তাহলে সে বিদ্যা মূল্যহীন।তাই অর্জি ত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের কৌশলই হচ্ছে মাঠকর্ম প্রশিক্ষণ।

মাঠকর্ম প্রশিক্ষন কি?
      মাঠকর্ম প্রশিক্ষন হচ্ছে জ্ঞান বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগের একটি কৌশল।আধুনিক সমাজকর্মের যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি তা অর্জন বা বাস্তবায়নে পরিপক্কতা আনয়নে এই প্রশিক্ষনের বিকল্প নাই।মাঠকর্ম প্রশিক্ষন ছাড়া একজন সমাজকর্মী পরিপূর্ন শিক্ষালাভে সক্ষম হয় না।তাই তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি মাঠকর্ম সমাজকর্ম পাঠ্যক্রমের অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

      পেশাগত জ্ঞান অর্জন ছাড়া সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। মাঠকর্ম প্রশিক্ষনের মাধ্যমে একজন সমাজকর্মীর দৃষ্টিভঙ্গীর প্রসার ঘটে,চিন্তাশক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটে।এছাড়া প্রশাসনিক নীতিমালা প্রণয়নের ও প্রয়োগের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে মাঠকর্ম প্রশিক্ষন যথার্থ মাধ্যম।

মাঠকর্ম প্রশিক্ষনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ-
     আধুনিক সমাজকর্ম মানুষকে তার সমস্যার বাস্তবভিত্তিক সমাধান এবং জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে। এজন্য পূথিগত শিক্ষা বা জ্ঞানদানই নয় সাথে সাথে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়াই এর লক্ষ্য। হাতে কলমে শিক্ষা অর্থাৎ মাঠকর্ম প্রক্ষিণের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজকর্মের ছাত্র/ছাত্র্রীদর বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন করা এবং কিভাবে এ সকল সমস্যার সঠিকভবে সমাধান করা সম্ভব তার জ্ঞান দান করা।

      যে কোন শিক্ষা হাতে কলমে না করলে অপূর্ন থেকে যায়। আর এই অপূর্নতাকে পূরন করার জন্যই মাঠকর্ম প্রশিক্ষনের শরনাপন্ন হতে হয়।কর্মজীবনে যাতে সমাজকর্মীরা সমস্যা সমাধানে এই দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে তার জন্য আগে থেকেই মাঠকর্ম প্রশিক্ষন দেওয়া হয়ে থাকে।মোটকথা পেশাদার সমাজকর্মী তৈরী করাই হচ্ছে এর প্রধান উদ্দেশ্য।সমাজকল্যান শিক্ষায় ব্যবহারিক প্রক্ষিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলঃ

ক) সমাজকল্যান শিক্ষায় ছাত্র/ছাত্রীদের বাস্তব অবস্থার সাথে পরিচিত হবার সুযোগ করে দেওয়া।
খ) ছাত্র/ছাত্রীদের বাস্তব অবস্থা মোকাবেলা করতে শিক্ষা দেওয়া।
গ) বাস্তব সমস্যাগুলো চিন্থিত করে সমাধান করার কলা কৌশল শিক্ষা দেওয়া।
ঘ) বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া।

মাঠকর্ম প্রশিক্ষনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ
       আধুনিক সমাজকল্যানের পেশাগত ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে রয়েছে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা।তাত্ত্বিক সমাজকল্যান শিক্ষায় সমাজকর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জনের আলোচনা সংশ্লিষ্ট থাকে। মাঠকর্ম শিক্ষার উদ্দেশ্য হল আহরিত তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে সমাজকল্যানের কার্যক্রম দ্বারা সমাজকর্মীরা সমাজকর্মের মৌলিক ও সাহায্যকারী পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যক্তি,দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধান উন্নয়নের ভূমিকা পালনের জ্ঞান অর্জন করতে সচেষ্ট হয়।ফলশ্রুতিতেএকজন শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গীর প্রসার,চিন্তাশক্তিও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ সাধন ঘটে।

       আধুনিক সমাজকর্ম একটি ফলিত সামাজিক বিজ্ঞান। এর প্রধান লক্ষ্য হলো সমাজ সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে সমাজের মানুষের সর্বাগীন কল্যান সাধন করা।

 মাঠকর্ম প্রশিক্ষনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দেখানো হলোঃ-

১) ব্যক্তি,দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতিগুলো বাস্তব প্রয়োগ মাঠকর্ম প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সম্ভব।
২) তাত্ত্বিক জ্ঞান মাঠকর্ম প্রশিক্ষন শিক্ষার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দক্ষতা অর্জন করা যায়।মাঠকর্ম প্রশিক্ষন কেন্দ্রের লক্ষ্য ,উদ্দেশ্য সাংগঠনিক কাঠামো প্রশাসনিক কাঠামো ও কর্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।
৩) এজেন্সীর মূল্যবোধ ,আদর্শ সম্পর্কে জানা এব ং সমাজকর্মের মূল্যবোধের সুষ্ঠ সামঞ্জস্যতা বিধান করা যায় 
৪)  সমাজকর্মীর সেবামূলক মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত হয়।
৫)  সমাজ ও সমাজের মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়
৬) মাঠকর্ম প্রশিক্ষনের ক্ষেত্রে একজন সাহায্যকারী বা পরিবর্তন আনয়নকারী হিসাবে আত্মসচেতন হওয়া ও নিজেকে প্রয়োগ করতে কৌশল অর্জন করা যায়। 

 ‘ বিদ্যার সাথে বিনয়, শিক্ষার সাথে দীক্ষা, কর্মের সাথে নিষ্ঠা, জীবনের সাথে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলীর সংমিশ্রণ ঘটাতে পারলে সত্যিকারের আদর্শবান মানুষ হওয়া যায়।’

 ১৮৯৮ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ শতকের গোড়া থেকে ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে পঠিত ও অনুশীলিত হয়ে আসছে। ১৯৪৭সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকা শহরে অভিবাসী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রচলিত সামাজিক সেবাব্যবস্থা অনেকটা অপ্রতুল ও অকার্যকর প্রতীয়মান হয়। ফলে শহরের সামাজিক সেবা খাতকে উন্নত, কার্যকর ও সহজলভ্য করার লক্ষে সমাজকর্মের পেশাগত প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব অরোপ করা হয়। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন সরকারের উদ্যোগে ও জাতিসংঘের সহায়তায় বাংলাদেশে প্রথম সমাজকর্মের পেশাগত প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এ প্রশিক্ষণ ছিল নয় মাস মেয়াদি। এ প্রশিক্ষণ চলাকালেই সমাজকর্ম বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স কোর্স চালুর প্রস্তাব গৃহীত হয়। অতঃপর ১৯৫৮ সালে ঢাকায় কলেজ অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এ দেশের সমাজকর্মের প্রথম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৩ সালে এটি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট রুপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত হয়ে অদ্যাবধি সমাজকল্যাণ বা সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক, স্নাকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী দিয়ে আসছে। পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২ সালে জগন্নাথ কলেজ, ১৯৯৩ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পর্যায়ক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে সমাজকর্মে উচ্চশিক্ষা চালু হয়েছে। ২০০৯ সালে আমেরিকা তথা সারা বিশ্বের সমাজকর্ম শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা কাউন্সিল অন সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন(সিএসডব্লিউই) পরিচালিত ক্যাথেরিন ক্যানডাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন এ আমার একটি ফেলোশিপ করার সৌভাগ্য হয়। আমার গবেষণার বিষয় ছিল বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমুহে সমাজকর্মের শিক্ষা ও সিএসডব্লিউইর অ্যাক্রিডিটেশন অভিজ্ঞতা। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাজর্ম একটি পেশাগত বিষয় এবং এর পাঠদান সিএসডব্লিউইর অ্যাক্রিডিটেশন বা অনুমোদন বাধ্যতামূলক। বর্তমানে সিএসডব্লিউইর অনুমোদন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজেকর্ম বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দিয়ে আসছে। এবার আসি অনুশীলন বা পেশাগত দিকে। যুক্তরাষ্ট্র বা যেসব দেশে সমাজকর্মের পেশাগত স্বীকৃতি রয়েছে, সেসব দেশে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর দুই বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হয়। তারপর চিকিৎসক-আইনজীবীদের মতো লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলে তারা পেশাদার সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। অনেকে ব্যক্তিগত ক্লিনিক খুলে মনোসামাজিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাউন্সেলিং করে ভালো আয় করেন। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা খুবই কার্যকর। এশিয়ার মধ্যে সমাজসেবা ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার পেশাদার সমাজকর্মী নিয়োগের হার সম্ভবত সবোর্চ্চ হবে। ২০০৯ সালের ১৫-১৮ এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত সমাজকর্মে শিক্ষার উন্নয়ন ও অনুশীলন শীর্ষক এশিয়া-প্যাসিফিক( অস্ট্রেলিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই পর্যন্ত) অঞ্চলের ২১টি দেশের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনিষ্ঠিত হয়। সিউল সম্মেলনে বাংলাদেশের সমাজকর্ম শিক্ষার ওপর একটি প্রবন্ধ পাঠের সুযোগ হয়েছিল আমার। এ সম্মেলন থেকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ধনী-দরিদ্র দেশেই সমাজকর্ম শিক্ষার উন্নয়ন এবং সরকার ও এনজিও পরিচালিত সামাজিক উন্নয়ন কর্যক্রমে পেশাদার সমাজকর্মী নিয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যেমন-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থান, ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহার; শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পুষ্টি, গণতন্ত্র-মানবাধিকার, অপরাধ-কিশোর অপরাধ, মানব পাচার, পরিবেশ-জীববৈচিত্র সংরক্ষণ প্রভৃতি বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োগ অধিক ফলপ্রসূ। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারের সমাজসেবা বিভাগের সমাজসেবা কর্মকর্তা পদটি সমাজকল্যাণ বা সমাজকর্মের স্নাতকদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। পরে তা সব বিষয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের পেশাগত সমাজকর্ম বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। উপযুক্ত পেশাদার সংগঠনের অভাবে বাংলাদেশে কর্মরত এনজিও নেতৃত্বকেও আমরা এ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞানের কার্যকরিতা সম্পর্কে জানাতে পারিনি। যুক্তরাষ্ট্রে করা আমার ছোট গবেষণাকর্মের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, বাংলাদেশের পেশাগত সমাকর্মের যাত্রাকালের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার লক্ষে সামজকর্ম শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রয়োগ সম্পর্কিত করণীয় নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা। এ কাজটি করতে গিয়ে আমি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাক্রিডিটেশন- সংক্রান্ত ম্যানুয়েল-বই-দলিলপত্র ঘেঁটেছি; ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড, জর্জ ম্যাসন, ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়; পেনসিলবেনিয়ার ওয়েস্ট চেস্টর বিশ্ববিদ্যালয়; টেক্সারে হিউজটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিনেসোটর উইনোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়রে সোশ্যাল ওয়ার্ক স্কুলের ডিন ও অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, সিএসডব্লিউইর অ্যাক্রিডিটেশন বা ক্যান্ডিড্যাসি কর্মশালায় অংশ নিয়েছি। আলোচনার সূত্রপাত এ অর্থে যে ১৯৫৮ সাল থেকে বাংলাদেশে সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী কোর্স চালু হলেও এটি এখনো পেশাগত স্বীকৃতি লাভ করেনি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো অ্যাক্রিডিটেশনের ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে সমাজকর্মের পেশাগত স্বীকৃতি এবং সমাজকর্ম শিক্ষাকে অন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে অ্যাক্রিডিটেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং তা করতে হলে আমাদের ছাত্র ভর্তিপদ্ধতি, কারিকুলাম, সিলেবাস, বিষয় সূচিতে পরিবর্তন পরিমার্জন জরুরি। দৃষ্টান্ত স্বরুপ, ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্র ইচ্ছা ও মনোভঙ্গি পরীক্ষা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে; পাঠ্যসূচিতে একদিকে যেমন সিএসডব্লিউইর নির্দেশনা অনুসরণ করে নতুন কোর্স যুক্ত করতে হবে; অন্যদিকে দেশ বা স্থানীয় সমস্যা মোকাবিলার লক্ষে দেশজ সাহিত্য বা জ্ঞানকে প্রাধ্যন্য দিয়ে নতুন কোর্স তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নত এ উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরস্পরের একাডেমিক সফর, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং ছাত্র শিক্ষক শিক্ষা বিনিময়; স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার-ওয়ার্কশপের আয়োজন করা একান্ত আবশ্যক। আর সমাজকর্ম শিক্ষা ও অনুশীলনের মান উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী করার লক্ষে বিশ্বব্যাপী যেসব সংস্থা যেমন-সিএসডব্লিউই ন্যাশনাল অ্যাসোসিযেশন অব সোশ্যাল ওয়ার্কশপ(এনএএসডব্লিউ)এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যালওয়ার্ক এডুকেশন(এপিএএসডব্লিউ) প্রভূতির সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপন ও একযোগে কাজ করতে হবে। এসব করতে হলে বাংদেলাদেশের সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বা সমাজকর্ম বিভাগ থেকে সমম্বিত উদ্যোগে নিতে হবে এখনই। আর তা যদি সম্ভব হয়, সম্ভব তবেই বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ বা সমাজকর্ম শিক্ষা ও অনুশীলনের মান উন্নয়ন সম্ভব হবে। এভাবে একদিকে যেমন সরকারের সমাজসেবা বিভাগ ও দেশের এনজিও সেক্টর সমাজকল্যাণ বা সমাজকর্মে স্নাতকদের কাজের সুযোগ সৃস্টি হবে, অন্যদিকে তেমনি দেশের সামাজিক উন্নয়ন খাতে সমৃদ্ধ হবে। তাই আর কালবিলম্ব না করে বাংলাদেশে সামাজকল্যাণ বা সমাজকর্মে উচ্চশিক্ষা অনুশীলনের যুক্ত (সরকারি-বেসরকারি সমাজে সেবা খাতে কর্মরত)সবাইকে নিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখতে চাই। ড. মুহাম্মদ সামাদ: অধ্যাপক ও পরিচালক; সমাজকর্ম গবেষাণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
(ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত)।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.